আইফোনের চেয়ে যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ভালো

অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইফোনের বিতর্ক যেন শেষ হওয়ার নয় টেক দুনিয়ার বিতর্কগুলোর অন্যতম—অ্যান্ড্রয়েড না আইওএস? কোন ঘরানার স্মার্টফোন ভালো?
আইওএস অ্যাপলের নকশাকৃত মুঠোফোন অপারেটিং সিস্টেম, যা শুধু অ্যাপলের প্রযুক্তি পণ্যেই ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা ২০০৫ সাল থেকে গুগলের অধীনে ধারাবাহিক উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফোনে ব্যবহার করা হয় এই অপারেটিং সিস্টেম।
স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে সবাই নিজ অভিজ্ঞতা ও জানাশোনা থেকে পরামর্শ বিতরণ করে থাকে। কারও কাছে হয়তো আইওএসের আইফোন ভালো, কারও আবার অ্যান্ড্রয়েডই বেশি পছন্দের। ম্যাশেবল প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় বেশির ভাগের কাছে অ্যান্ড্রয়েডের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি। আবার অ্যাপ্লিকেশন গ্রহণযোগ্যতা মান ও অ্যাপলের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, নিরাপত্তা, গতি এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য অনেকে আইফোনের ভক্ত।
তবে সফটওয়্যার নিয়ে সমস্যায় আইফোনের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ফোন ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক। বিশেষ করে ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যদিও এই স্বাধীনতাই কখনো কখনো বিপদ ডেকে আনে। অ্যান্ড্রয়েডের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙা যেমন খুব সহজ।
আসলে আইফোন বনাম অ্যান্ড্রয়েড ফোনের এ বিতর্ক কখনোই শেষ হওয়ার নয়। কারণ, প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেমেরই কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা রয়েছে। আসুন, আজ জেনে নিই যে পাঁচটি কারণে আইফোনের চেয়ে অ্যান্ড্রয়েডকে বেশি প্রাধান্য দেন ব্যবহারকারীরা—
 দুটোর অপারেটিং সিস্টেম পরস্পরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই করছে
বাড়তি ডেটা স্টোরেজ সুবিধা
অ্যাপলের সব পণ্যই বিল্ট-ইন স্টোরেজ, যেমনটি আইফোনও। এ ব্র্যান্ডের একটি প্রচলিত ফোন (আইফোন ৫ ও ৫এস‍) কিনতে গেলে আপনাকে ১৬ গিগাবাইট থেকে সর্বোচ্চ ৬৪ গিগাবাইটের মধ্যে বেছে নিতে হবে। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই বাড়তি ডেটা স্টোরেজ সুবিধা রয়েছে। জনপ্রিয় প্রায় সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই বাড়তি মেমোরি কার্ড স্লট রয়েছে; যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭-এ, যেখানে আপনি ২৫৬ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়তি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। এখানে দামেরও রয়েছে একটা বিশাল পার্থক্য। ৪ গিগাবাইট বিল্ট-ইন স্টোরেজের অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে ৬৪ গিগাবাইট মেমোরি কার্ড কিনতে যত খরচ হবে, আইফোন ৩২ গিগাবাইট ইউনিটের দাম কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি।
সহজ অপারেটিং সিস্টেম
আইওএসের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সহজতর। আইফোনের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নোটিফিকেশন দেখাও অনেক সহজ। এগুলো ব্যবস্থাপনাও অ্যান্ড্রয়েড লক স্ক্রিন থেকে একেবারেই ঝামেলাহীন। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েডে সহজে নোটিফিকেশন পরিষ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে নিজের ইচ্ছেমতো অ্যাপগুলো কাস্টমাইজ করার সুবিধাও।
উন্মুক্ত অ্যাপ সেন্টার হওয়ায় গুগলের নীতিমালার সঙ্গে মিলে গেলে সেসব অ্যাপ আপনি মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাবেন গুগল প্লে স্টোরে। কিন্তু অ্যাপলের ক্ষেত্রে এই একই ব্যাপার বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং কালক্ষেপণ করে। অ্যাপল সাধারণত যেকোনো অ্যাপ নিজেরা রিভিউ করে অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে ছেড়ে থাকে। তবে গুগল প্লে স্টোরের অ্যাপস থেকে অনেক সময় ক্ষতিকর ভাইরাসের শিকার হতে পারে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। এ ক্ষেত্রে ফোনে অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপস রাখার পাশাপাশি অন্য ব্যবহারকারীদের রিভিউ পড়ে নিলে বিপদ-মুক্ত থাকা যায়।
ম্যাপিং সুবিধা
আইফোন ৫-এর সঙ্গে অ্যাপল তাদের নিজস্ব ম্যাপিং সুবিধা জুড়ে দিয়েছে। এটা অনেকের কাছেই হাসি-তামাশার খোরাক! অ্যাপলের এ ম্যাপ এতটাই অবাস্তব যে দেখা গেছে, খোলা মাঠের জায়গায় নদী আর হাসপাতালের জায়গায় রেলস্টেশন! এ জন্য আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমাও চেয়েছে অ্যাপল। সেই ক্ষমাপ্রার্থনায় তারা নিজেরাই গুগল কিংবা নকিয়া ম্যাপস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।
অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করলেই বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তব ম্যাপ চলে আসবে আপনার হাতের মুঠোয়। তবে আইফোনেও এই ম্যাপস জুড়ে নেওয়া যায়, কিন্তু সেটা বাই-ডিফল্ট থাকে না। এদিক বিচারে আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডই এগিয়ে। গুগল ম্যাপের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাপ-সংক্রান্ত বাকি সেবাগুলোও পাওয়া যায়।
ওয়েব ব্রাউজিং ও মেইলে ডিফল্ট অ্যাপ
ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশন আইফোনের অন্যতম সীমাবদ্ধতা। স্বাভাবিক অবস্থায় ক্রোম কিংবা অন্য কোনো ব্রাউজারকে ডিফল্ট হিসেবে নির্ধারণ করা যায় না আইফোনে। মেইলের ক্ষেত্রে জিমেইলের বদলে আইফোন তার ব্যবহারকারীদের সব সময় উৎসাহিত করে তাদের ডিফল্ট মেইল অ্যাপ ব্যবহার করতে। সারা বিশ্বে ব্যবহারকারীদের কাছে ব্রাউজার হিসেবে ক্রোম, মোজিলা জনপ্রিয় ও পরিচিত। একইভাবে যেমন জিমেইল। ফোন ব্যবহারকারীরাও চান এই সেবাগুলো ব্যবহার করতে। কোথায় কোন অপশন আছে, কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করতে হয়, তা জানা থাকে বলে। কিন্তু আইফোন এ ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখে।
পাশাপাশি আইফোনে সরাসরি ওয়েব থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করা প্রায় অসম্ভব। ফাইল শেয়ারিংও অনেক ঝামেলাপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশির ভাগ মানুষ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করেন। ফলে পরিচিতদের সঙ্গে কোনো ফাইল আদান-প্রদানে ঝামেলায় পড়তে হয় আইফোন ব্যবহারকারীদের।
অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধা
আইওএস অপারেটিং সিস্টেম-চালিত স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ সফটওয়্যার-জনিত সমস্যার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের মধ্যে একই সমস্যায় ভুক্তভোগীর হার ৪৭ শতাংশ। কারও কারও মতে, আনলক করা আইফোনের চার্জও ক্ষয় হয় বেশ দ্রুত। আরও একটি অসুবিধা হলো, আইফোনের ব্যাটারি পাল্টানো যায় না। এর অরিজিনাল এক্সেসরিজ পাওয়াও ভীষণ ব্যয়বহুল ও ঝামেলাপূর্ণ। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই।
আইফোনের আরেকটি বড় অসুবিধা হলো ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে ডেটা নেওয়ার ক্ষেত্রে। বেশির ভাগ পিসিতে চলে উইন্ডোজ। অ্যান্ড্রয়েড সহজে উইন্ডোজে সংযোগ তৈরি করে। কিন্তু আইফোন তা করতে দেয় না। এর জন্য উইন্ডোজে আইফোনের সফটওয়্যার নামিয়ে নিতে হয়। সেই সফটওয়্যার ইনস্টল ও সংস্করণ হালনাগাদে ব্যবহারকারীদের ভুগতে হয়।

No comments:

Post a Comment