কৃষ্ণ গহ্বরের ঢেকুর

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বৃহৎ আকারের একটি কৃষ্ণ গহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন যেখান থেকে গরম গ্যাস বেরিয়ে আসছে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন।
তারা বলছেন, যখন কসমিক গ্যাস এই গহ্বরের কাছে গিয়ে পৌঁছচ্ছে তখন ওই গহ্বরটি সেই গ্যাস ভেতরে টেনে নিচ্ছে এবং একই সাথে কিছু গ্যাস ঢেকুর তোলার মতো করে এই মহাকাশে ফিরিয়েও দিচ্ছে।

হাবল ও চন্দ্রা টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এই উগড়ে দেওয়া গ্যাস। এই গ্যাস এমন একটি কৃষ্ণ গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে যা কীনা আমাদের এই পৃথিবী থেকে আটশো মিলিয়ন আলোক-বর্ষ দূর
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জুলি কমারফোর্ড বলেছেন, কৃষ্ণ গহ্বর হচ্ছে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত সর্বগ্রাসী এক রাক্ষসের মতো। আশেপাশে যা কিছু পায় তার সবকিছুই সে তার পেটের ভেতরে গোগ্রাসে টেনে নেয়। তবে তারা শুধু গিলেই খায় তা নয়, এসময় তারা বেশি খেয়ে ফেললে যেরকম ঢেকুর উঠে তেমনি করে তারা সেসব কিছুটা উগরেও দেয়।
তিনি বলেন, গিলে খাওয়া গ্যাস একবার উগড়ে দেয় এরকম বহু কৃষ্ণ গহ্বরের উদাহরণ আছে। কিন্তু আমরা এখন সুপারম্যাসিভ একটি কৃষ্ণ গহ্বরের সন্ধান পেয়েছি যেখান থেকে একবার নয়, দু'বার ঢেকুর উঠছে।
উগড়ে দেওয়া এসব গ্যাসের ভেতরে আছে উচ্চ-শক্তিমত্তার কণাও।
অত্যন্ত বৃহৎ আকারের এসব কৃষ্ণ গহ্বর সাধারণত দেখা যায় প্রায় সব বড় বড় গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই। এসব গ্যালাক্সি থেকে যেসব রশ্মি নিঃসৃত হচ্ছে সেগুলো ধরা পড়েছে চন্দ্রা টেলিস্কোপে। এই রশ্মিকে অনুসরণ করেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই কৃষ্ণ গহ্বরটির অবস্থান চিহ্নিত করেছেন।
অন্যদিকে হাবল টেলিস্কোপে দেখা গেছে নীল রঙের একটি গ্যাসের মেঘ কৃষ্ণ গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে প্রথমবারের উদগীরণের পর। তারা দেখেছেন, গ্যাসের এটম থেকে এসব ইলেকট্রন নির্গত হচ্ছে। তারা অনুমান করছেন যে কৃষ্ণ গহ্বরটির চারপাশে রেডিয়েশনের বিস্ফোরণের কারণে এরকমটা হয়ে থাকতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপের সাহায্যে এসবরে কিছু ছবিও তুলতে সক্ষম হয়েছেন
বিজ্ঞানী জুলি কমারফোর্ড বলছেন, এটা অনেকটা এরকম। ভেবে দেখুন কেউ খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন। এসময় তারা যেমন ঢেকুর তোলেন এই কৃষ্ণ গহ্বরগুলোও সেভাবে সবকিছু গিলে খাওয়ার পর ঢেকুর তুলতে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ হলো- কৃষ্ণ গহ্বরগুলো একটি চক্রের ভেতর দিয়ে চলে। গ্যাস উগরে দেওয়ার কারণে সেটি একবার উজ্জ্বল হয়ে উঠে এবং তারপর আবার অন্ধকারে ডুব দেয়।

No comments:

Post a Comment