যৌন শিক্ষা নিয়ে এত লজ্জা কেন?

যৌন শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ অথচ বাংলাদেশে এই নিয়ে কথা বলতে সংকোচ সবার মধ্যে, বিশেষ করে মেয়েরা তো মুখই খুলতে চায় না৷ আর জার্মানিতে ‘যৌন’ শব্দটি স্বাস্থ্যের সাথে কতটা জড়িত, তা শেখানো হয় প্রাথমিক স্কুলেই৷


এগারো-বারো বছর বয়সের পর থেকেই ছেলে-মেয়ে সবারই যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে জানা দরকার৷ এই সময়টা বয়ঃসন্ধিকাল, অর্থাৎ কিশোর-কিশোরী থেকে নারী ও পুরুষ হয়ে ওঠার সময়৷ এই বয়স থেকে সাধারণত মেয়েদের ‘পিরিয়ড’ বা ‘মাসিক’ শুরু হয়৷ পাশাপাশি শরীর এবং মনে ঘটতে থাকে নানা পরিবর্তন৷

বাংলাদেশে মেয়েরা তাদের এই পরিবর্তনের খানিকটা ধারণা হয়ত পায় বড় বোন বা বান্ধবীদের কাছ থেকে৷ তাও অতি গোপনে, লুকিয়ে যেন বাড়ির বড়রা তা জানতে বা বুঝতে না পারে৷ ফলে মেয়েরা অধিকাংশক্ষেত্রে মাসিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায় না৷ না বাড়িতে, না স্কুলে৷  ক্লাস সেভেন-এইটের বইয়ে ঋতুস্রাব সম্পর্কে ছোট করে অস্পষ্ট কিছু পড়া শুনা আছে। কিন্তু শিক্ষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা না পড়িয়ে এড়িয়ে যান।

ছোটবেলায় শিশুরা বেশিরভাগ সময় যে মায়ের সাথেই থাকে – এ কথা ঠিক৷ তাই বলে যে মায়ের সাথে পরেও সম্পর্ক ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু! সব সময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই৷

বাংলাদেশে মেয়েলি ব্যাপারগুলো অত্যন্ত ‘গোপন বিষয়’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো তখন৷ শিক্ষা ব্যবস্থাই এসব ব্যাপারে মূল দায়িত্ব পালন করা উচিৎ।

প্রাথমিক পর্যায়েই  যৌন শিক্ষা, অর্থাৎ যৌনতা সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে জানানো হয়৷ যৌন সম্পর্ক কী?, কম বয়সে যৌনতার ক্ষতিকর দিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, গর্ভধারন, গর্ভপাত এবং অবশ্যই যৌনরোগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করা হয় স্কুলেই৷

নিজের শরীর সম্পর্কেও সচেতন করে দেয়া হয় তাদের৷ ফলে কোনটা ভালোবাসার স্পর্শ আর কোনটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে – সেটা তারা সহজেই বুঝতে পারে৷ যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের মতো কোন পরিস্থিতে করণীয় কী – সেটাও তাদের বোঝানো হয়৷

তবে শুধু স্কুল নয়, সন্তানকে ‘যৌনতা’ সম্পর্কে সচেতন করতে মা-বাবারও ভুমিকা রয়েছে৷ আর সেজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সন্তানের সাথে সহজ সম্পর্ক তৈরি করা৷ যাতে সন্তান নিঃসংকোচে যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে৷ বয়সের ব্যবধান যাই হোক, সন্তানের সঙ্গে যাতে মায়ের দূরত্ব কখনো তৈরি না হয় সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে৷

বাংলাদেশ, এমনকি ভারতেও যৌনতা নিয়ে, যৌন শিক্ষা নিয়ে আরো খোলামেলা এবং শিক্ষিত আলোচনা হওয়া উচিত৷ এতে করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে৷ শিক্ষা, আধুনিকতা, ফ্যাশন আর পোশাকের দিক দিয়ে বাঙালিরা যতটা এগিয়ে গেছে, যৌন শিক্ষার দিক দিয়ে ততটাই পিছিয়ে রয়েছে৷ তাই এই ব্যাপারে সচেতনতা জোরদার করুন।

No comments:

Post a Comment