আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। দিবসটিতে বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করছে জাতি।

সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটা চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর স্থানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধুর সমাধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের কবর দেওয়া হয়েছে বনানী কবরস্থানে।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও নিহত অন্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন তিনি।
সকাল নয়টায় প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় সুরা ফাতেহা পাঠ করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান করবে। বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালি জাতিকে মুক্তির আলো দেখানো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল চক্রান্তকারী কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য। ঘাতকেরা ওই দিন নারী ও শিশুদেরও রেহাই দেয়নি, যা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ১ আগস্ট থেকেই শ্রদ্ধা, আলোচনা, মিলাদ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ছবি প্রদর্শনীসহ শোকের মাসের কর্মসূচি পালন করছে। আজ ও কাল মঙ্গলবার থাকছে বিস্তারিত কর্মসূচি।
আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। তাঁরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আত্মনিয়োগে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
 ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে ধারনমণ্ডি ৩২ এলাকা। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। হারানোর বেদনা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় জাতির জনককে।
সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে, বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে ১৫ আগস্টের সব শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। রাষ্ট্রপতির যাওয়ার পর ৬টা ৪৪ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে প্রতিকৃতিতে ফের শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ বঙ্গবন্ধুর স্বজনরা স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রায় পৌনে ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাদুঘরের ভেতরে যান, সেখানে তিনি বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সবার বিষাদ চেহারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের শোকাবহ সে দিনের কথা। কালো পোশাক, কালো ব্যাজ পরে এসেছিলেন সবাই। ৭টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এলাকা ছেড়ে ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বনানী কবরস্থানে যান। সাড়ে ৭টার দিকে কবরস্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রদ্ধা জানাতে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় এদিকে বনানী কবরস্থানেও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর জনতার ঢল নামে। বিপুলসংখ্যক মানুষ ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

No comments:

Post a Comment