ফোনে নজরদারি, কী করি!

পকেটে স্মার্টফোন নিয়ে ঘোরা মানে একজন অনুসরণকারীকে নিয়ে ঘোরা—এ কথা এখন সবাই জানেন। যেমন সার্চ-সুবিধা নিতে গিয়ে গুগলকে দিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত সব তথ্য।
পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফেসবুকের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর বাইরে মোবাইল ফোনে ছবি, ব্লুটুথ প্রযুক্তি, এমনকি ফোনের ব্যাটারি পর্যন্ত ব্যবহারকারীর ওপর নজরদারিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

ছবির মেটাডেটা

স্মার্টফোন বা ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হলে ছবিতে দিন, সময়, ক্যামেরার নানা তথ্য থেকে যায়। এ ছাড়া স্মার্টফোনে জিওট্যাগিং সুবিধা থাকায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের তথ্যও সংরক্ষিত থাকে। জিপিএস ব্যবহার করে প্রাপ্ত তথ্য ও ছবির তথ্য মিলিয়ে সহজেই ব্যবহারকারীর অবস্থানসহ দরকারি তথ্য বের করে নিতে পারে সাইবার দুর্বৃত্তরা। নজরদারিতে এসব তথ্য ব্যবহার করা হতে পারে।

বেশির ভাগ স্মার্টফোনে জিওট্যাগ মেটাডেটা সরিয়ে ফেলার সুবিধা থাকে। আইফোন থেকে মেটাডেটা সরাতে সেটিংস থেকে প্রাইভেসিতে যান। সেখানে লোকেশন সার্ভিসে গিয়ে জিপিএস-সেবা বন্ধ করে দিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েডে ক্যামেরা অ্যাপের মেনুতে গিয়ে গিয়ার আইকন থেকে জিপিএস বা জিওট্যাগ বন্ধ করে দিতে পারেন।

ব্লুটুথ চালু থাকলে সমস্যা
ক্যাসপারস্কির গবেষকেরা বলেন, ব্লুটুথ-প্রযুক্তি ব্যবহার করেও নজরদারি করা হতে পারে। ব্লুটুথ সেটিংস ঠিকমতো পরিবর্তন না করলে ব্লুটুথ ব্যবহার করে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অবস্থানসহ নানা তথ্য বের করে নিতে পারে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এ ক্ষেত্রে ব্লুটুথ যদি ‘নন-ডিসকভারেবল’ মোডে রাখা হয়, তবু তা নিরাপদ নয়। দুর্বৃত্তরা ব্লুটুথ কাজে লাগিয়ে ব্লুজ্যাকিং করতে পারে। অর্থাৎ, ফোনে ব্লটুথ দিয়ে নজরদারির সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার ঢোকাতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা হিসেবে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া প্রয়োজন না হলে ব্লুটুথ বন্ধ রাখা উচিত।

ব্যাটারিও বিপজ্জনক

মোবাইল ফোনের ব্যাটারির মাধ্যমে নজরদারি করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকেরা। এই পদ্ধতিতে স্মার্টফোন ব্যাটারির চার্জে সামান্য হেরফের হওয়ার বিষয়টি হিসাব করে ব্যবহারকারী কোথায় কোথায় যান, সে বিষয়টি ধরা যায়। যদি ব্যবহারকারী মোবাইল ফোন নিয়ে কোথায় কোথায় যান, সে বিষয়টি কিছুদিন ধরে খেয়াল করা হয় এবং এই রুটিন স্বাভাবিক হয়, তখন ৯০ শতাংশ নির্ভুলভাবে ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্ত করা যায়। কিন্তু ফোন ব্যবহারকারী যদি রুটিনমাফিক না চলেন, তখন তাঁর অবস্থান শনাক্ত করার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশে নেমে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনে এভাবে নজরদারির বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইল ফোনের সাধারণ কোনো অ্যাপই যথেষ্ট। এ ধরনের অ্যাপকে ব্যাটারি ব্যবহার-বিষয়ক তথ্য সংগ্রহে গুগলেরও কোনো বাধা নেই। সাইবার দুর্বৃত্তরা চাইলে এ রকম কোনো অ্যাপ তৈরি করে সহজেই ব্যবহারকারীর ওপর নজরদারি করতে পারে।

ব্যাটারি ব্যবহার করে নজরদারি করা হলে তা ধরা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান থাকা যায়। ব্যাটারিতে চার্জ বেশি কমে গেলে তথ্য সংগ্রহ করা সুবিধা হয়; তাই চার্জ বেশি রাখা ভালো। এ ছাড়া যেসব অ্যাপ বেশি চার্জ শেষ করে, সেগুলো আনইনস্টল করে দেওয়া যেতে পারে। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, গিজমোডো, দ্য গার্ডিয়ান।

No comments:

Post a Comment