আমেরিকার সেরা ধনী বিল গেটস, তার অবিশ্বাস্য জীবনের কিছু তথ্য

আমেরিকার ধনীদের তালিকার শীর্ষে লেখা হলো মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের নাম। ফোর্বসের তালিকায় মার্কিনিদের মধ্যে শীর্ষ ধনী আবারো বিল গেটস। টানা ২১ বছর তিনি এই স্থানটি নিজের করে রেখেছেন। ১৯৮০ এর দশক থেকেই বিল এবং তার সহকর্মী পল অ্যালেন কম্পিউটারে পরিবর্তন আনার পেছনে উঠে-পড়ে লাগেন। খুব শিগগিরই বিশ্বের সেরা ধনী বনে যান
তিনি।

প্রিথিবীর সেরা প্রযুক্তির সব পণ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বিমান এবং ৬৬ হাজার বর্গ ফুট এলাকাজুড়ে একটি বাড়িও রয়েছে যার ডাকনাম 'জানাডু ২.০'। এই ব্যক্তিত্বের জীবন নিয়ে জানার আগ্রহের শেষ নেই মানুষের। এখানে জেনে নিন তার বিশাল কর্মময় জীবনের কিছু তথ্য। ১. ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর আইনজীবী বাবা ও স্কুল শিক্ষক মায়ের ঘরে জন্ম নেন বির গেটস। স্কুলে শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে নিয়ে নানা কথা থাকলেও তিনি ছিলেন মেধাবী। টিনএজ বয়সে তার জানার আগ্রহ এত বেশি ছিল যে ওই বয়সে বিল 'ওয়ার্ল্ড বুক অব এনসাইক্লোপিডিয়া'-র সবগুলো পার্ট পড়েছিলেন। ২. তাকে কঠোর নিয়মে বন্দি সিয়াটলের একটি প্রাইভেট বিদ্যালয় 'লেকসাইড স্কুল'-এ ভর্তি করানো হয়। সেখানেরই ছাত্র ছিলেন মাইক্রোসফটের আরেক প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন। কম্পিউটার নিয়ে তার আগ্রহের শুরু নাকি হয়েছিল ওই স্কুলে যাওয়ার পর।
 ৩. ১৯৭৩ সালে ওই স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর হার্ভার্ডে আইনকে মুখ্য বিষয় হিসেবে নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। তবে শিগগিরই তিনি উচ্চতর গণিত ও কম্পিউটার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দেন।
৪. হার্ভার্ডে তার পরিচয় হয় স্টিভ বালমারের সঙ্গে। এই ব্যক্তিকে তিনি পরে মাইক্রোসফটে আনেন ও সিইও করে দেন।
৫. দুই বছর পরই তিনি পলকে নিয়ে মাইক্রোসফটের কাজ শুরু করেন। তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি। কিন্তু ২০০৭ সালে তাকে ডক্টরেট সম্মাননায় ভূষিত করে হার্ভার্ড।
৬. ১৯৭৭ সালে স্কুলে থাকা অবস্থাতেই গেটস বিশ্বের প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার 'এমআইটিএস অলটেয়ার' নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মাধ্যমেই ম্যাক্সিকোতে বিল ও পল তাদের প্রথম সফটওয়্যার কম্পানির কাজ শুরু করেন।
৭. ১৯৭৯ সালে মাইক্রোসফটকে তারা প্রথমবারের মতো সিয়াটলে আনেন।
৮. ১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ তৈরি করে এবং ১৯৮৬ সালে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। ১৯৮৭ থেকেই ৩১ বছর বয়সী বিল গেটস একজন বিলিওনিয়ার।
৯. ১৯৯৫ সালে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার।

১০. ১৯৯৮ সালে তাদের আদালতে দাঁড়াতে হয়। অভিযোগ ছিল, মাইক্রোসফট তাদের ক্ষমতার ব্যবহার করে সফটওয়্যারের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য চালাচ্ছে। তখন বিল গেটসকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।
 ১১. ১৯৮৭ সালে মাইক্রোসফটের এক কর্মী মেলিন্ডার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে তার পরিচয় হয়। এই নারীই পরবর্তিতে তার স্ত্রী হন। ১৯৯৪ সালে তারা বিয়ে করেন এবং পরে মেলিন্ডা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চ্যারিটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
১২. বিল, মেলিন্ডা এবং তাদের তিন সন্তান ওয়াশিংটনে ১২১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে গড়া একটি বাড়িতে বাস করছেন। এ বাড়িতে গান শোনা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও আলোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।
১৩. বিশ্বের সেরা পড়ুয়াদের একজন বিল গেটস। বর্তমানে বিশ্বের সেরা ও দুর্লভ বইয়ের বিশাল সম্ভার রয়েছে তার। ১৯৯৪ সালে তিনি ভিঞ্চির লেখা 'কোডেক্স লেসিস্টার' বইটি কেনেন ৩০.৮ মিলিয়ন ডলারে।
১৪. বিশ্বের সেরা পেইন্টিংয়ের সম্ভারও রয়েছে বিল গেটসের কাছে। ১৯৯৮ সালে তিনি উইস্লো হোমারের 'লস্ট অন দ্য গ্রান্ড ব্যাংকস' ছবিটির জন্য ৩৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করেন যা একটি রেকর্ড স্থাপন করে।
১৫. ফ্লোরিডার ওয়েলিংটনে একটি মধ্যযুগীয় নকশার বাড়ি কিনেছেন ৮.৭ মিলিয়ন ডলারে। মাঝে-মধ্যে ছুটি কাটাতে সেখানে যান বিল।
১৬. বিল তার ছেলেকে নিয়ে শিক্ষা সফরে যেতে পছন্দ করেন। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে খনি থেখে শুরু করে মিসাইল সিলোতে পর্যন্ত সফর করেছেন
 ১৭. গ্রিনল্যান্ডের একটি বিশেষ স্কেটিং স্পট আপুসুইট অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প এর কয়েকজন সদস্যের একজন তিনি।
১৮. দ্রুত গতির গাড়ির প্রতি মোহ রয়েছে গেটসের। তার সংগ্রহে রয়েছে পোর্শে ৯৩০ টার্বো, মার্সিডিজ, জাগুয়ার এক্সজে৬, ক্যারেরা ক্যাব্রিওলেট ৯৬৪ এবং ফেরারি ৩৪৮। মাইক্রোসফটের প্রথম যুগে তিনি পোর্শে ৯১১ দিয়ে মরুভূমিতে রেস করতেন।
১৯. একবার জেলেও যেতে হয় তাকে ১৯৭৭ সালে। তাকে জামিনে মুক্ত করেন পল অ্যালেন।
২০. ১৯৯০ সালে গেটস তার পোর্শে ৯৫৯ মডেলটি নিয়ে আসেন। কিন্তু তা আটকে দেয় কাস্টমস। কারণ এই গাড়িগুলো রাস্তায় চলার উপযোগী কিনা এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কিনা তা পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল।
২১. টেনিস খেলা বিলের প্রিয় শখের একটি। ২০০১ সালে তিনি জেফ বেজোসের সঙ্গে একটি চ্যারিটি ম্যাচ খেলেন।
২২. বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটস দুজন দারুণ বন্ধু। ১৯৯০-এর দশকে মেলিন্ডাকে যখন বিল বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তখন তাকে একটি আংটি এনে দিয়েছিলেন বাফেট। বর্তমানে বাফেটের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের বোর্ড সদস্য বিল গেটস। আবার বাফেটও 'বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন'-এ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন।
২৩. ২০০০ সালে মাইক্রোসফটের সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান বিল। তিনি চেয়ারম্যান হয়ে গুটিকয়েক কাজের ভার নেন। বর্তমানে সিইও নাদেলাকে টেকনলজি অ্যাডভাইজার হিসেবে নানা পরামর্শ দেন বিল।
 ২৪. গেটস দম্পতির ফাউন্ডেশনটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য ও জীবনমানের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে।
২৫. ১৯৯৭ সালে নিজের জন্য একটি বিমান কেনেন ২১ মিলিয়ন ডলার খরচ করে। সোশাল মিডিয়ায় অবশ্য এ বিষয়ে বলেন, ব্যক্তিগত বিমান কেনা অনেকটা দোষপূর্ণ আনন্দের মতো। তবে ফাউন্ডেশনের কাজে প্রায়ই বহু দূরে যেতে হয় আমার। তাই বিমানটি কেনা।
২৬. ২০১০ সালে বাফেট, বিল ও মেলিন্ডা এক হয়ে একটি ক্যাম্পেইন করেন যার শিরোনাম ছিল 'দ্য গিভিং প্লেজ'। এর মাধ্যমে বিশ্বের ধনীদের উৎসাহিত করা হয় মানব কল্যাণে তাদের সম্পদের অর্ধেক দান করে দিতে। ইতিমধ্যে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে স্বাক্ষর করেছেন পল অ্যালেন, ল্যারি এলিসন, স্টিভ কেস এবং মার্ক জুকারবার্গ।
২৭. এইচআইভি প্রতিরোধে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিশেষ কনডম তৈরির একটি প্রজেক্টে অর্থ প্রদান করেন বিল গেটস।

No comments:

Post a Comment