বার্ধক্য দূর করার নিয়ম আবিস্কার !

যৌবন কে না চায়!আর এই যৌবনের সবসময়  জয়গান গেয়েছে মানবজাতি । আদিম কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির নিয়মটাকে জেনে , মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতিকে জয় করার চেষ্টা করেছে । যার কারণে মানব জাতির ইতিহাস প্রকৃতিকে জয় করার ইতিহাস । প্রাকৃতিক শক্তির কাছে  মানুষ তখনই
অসহায় থেকেছে যতক্ষণ না প্রাকৃতিক নিয়মটাকে জেনেছে ।
জীবন মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । আর এই জীবন সে পায় একটিবার । তাই মানুষ জীবনের রহস্য উন্মোচন ও মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছে ,হতে চেয়েছে চির যৌবনা । কিন্তু, জৈবিক নিয়মে শরীরে জরা আসতে বাধ্য। জরাকে ঠেকিয়ে রাখা কি সম্ভব? সম্ভব কি বিলম্বিত করা? বিজ্ঞানীদের একটা অংশ বলছে, সম্ভব! হ্যাঁ, নেচার পত্রিকায় সমপ্রতি এই তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আর তার পরেই শোরগোল পড়ে গেছে বিজ্ঞানী মহলে। টনি ওয়াসি-কোরে নামে এক গবেষক সেখানে জানিয়েছেন, রক্তই সেই অমূল্য রতন। যার কল্যাণে কৈশোর যৌবনে এবং যৌবন জরায় রূপান্তরিত হয়। নবীন রক্তই পারে প্রবীণের জরা বিলম্বিত করতে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
টনি জরাগ্রস্তদের নিয়েই কাজ করেন। প্রথম দিকে তিনি অ্যালঝাইমার্স নিয়ে গবেষণা করতেন। ভুলে যাওয়ার এই রোগে প্রবীণদের একটা বড় অংশ ইদানিং ভীষণভাবে আক্রান্ত। এবং সেটা গোটা বিশ্ব জুড়ে। বৃদ্ধ হওয়ার আগে, তার যৌবনকালে কি আগাম বলে দেওয়া যায় কে এই রোগে আক্রান্ত হবেন? টনি এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে তিনি শেষ অবধি পৌঁছালেন রক্তে। দাবি করলেন, নবীন রক্তের ভিতরেই লুকিয়ে আছে যৌবনের চাবিকাঠি।

বিজ্ঞানীদের দাবি, হূিপণ্ড থেকে ধমনী, শিরা, উপশিরা, জালিকা হয়ে ফের হূিপণ্ডে ফিরতে রক্ত সারা দেহে প্রায় ৯৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। নিজের শরীরে প্রায় ৭০০ উপাদান বহন করে চলে সে। উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের সকলের কাজ কী, তা বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়। টনি ভাবলেন, এই উপাদানগুলির কোনও একটির মধ্যে মস্তিষ্কের ব্যাধি অ্যালঝাইমার্স-এর আগাম সঙ্কেত থাকতে পারে। গবেষণার জন্য ২৪ জনের একটি দলও গঠন করলেন তিনি। সেই গবেষণায় উঠে এল, বয়স যতই বাড়ে রক্তে কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ তত কমতে থাকে। ২০ বছর পরে এই প্রোটিনগুলির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে যায়। উল্টো দিকে, কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রবীণদের রক্তে কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ আবার প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়। এই প্রোটিনের বাড়া-কমার সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স-এর সম্পর্ক খুঁজে পেলেন তারা। ২০০৭-এ সেই ফলাফল প্রকাশ পেল।

অন্যদিকে, স্টেম কোষ নিয়ে কাজ করছিলেন আর এক গবেষক, থমাস রান্ডো। শরীরের কোষগুলিকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে ওই কোষের প্রয়োজন। কিন্তু, প্রবীণদের স্টেম কোষ ঠিক মতো কাজ করে না। সে কারণেই বৃদ্ধ বয়সে কোনও ক্ষত সারতে বেশি সময় লাগে। থমাসের মাথায় প্রশ্ন এল, কোনও সঙ্কেত পেয়ে কি স্টেম কোষ কাজ বন্ধ করে দেয়? সেই সঙ্কেত কি তবে রক্তই বয়ে বেড়ায়? ঠিক এই জায়গাতেই এসে দুই গবেষকের প্রশ্নের চেহারা মিলে যায়। তাঁরা একসঙ্গে কাজ শুরু করলেন।

মূলত ইঁদুরের উপরেই নানা পরীক্ষা চালানো হল। তরুণ ইঁদুরের রক্ত ঢুকিয়ে দেওয়া হল প্রবীণ ইঁদুরের শরীরে। এ বার যা দেখা গেল, তাতে চোখ কপালে উঠে গেল বিজ্ঞানীদের! দেখা গেল, রক্ত বেশ কিছু প্রোটিন বহন করে যা কোষকে সতেজ রাখে। আবার কিছু প্রোটিন কোষকে বুড়োটে করে দেয়। কম বয়সীদের রক্তে এই সতেজ করার প্রোটিনগুলি খুব বেশি থাকে। বয়স যত বাড়ে ততই কমতে থাকে এসব প্রোটিন। কাজেই প্রবীণের শরীরে নবীন রক্ত যেন ‘মিরাকল’ ঘটিয়ে ফেলল!

এ বিষয়ে গবেষকদের দু’টি ধারণা আছে। এক, কোষগুলি এসব প্রোটিন তৈরি করে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। দুই, জিনের মধ্যেই এমন ব্যবস্থা আছে যাতে এসব প্রোটিন উত্পাদন আপনা থেকেই কমে আসে। পাশাপাশি, বয়স বাড়লে রক্তে অন্য ধরনের প্রোটিনগুলি বেড়ে যায়। যা কোষের ক্ষতি করে।

সমপ্রতি নেচার পত্রিকায় তাদের গবেষণার ফলাফল বেরোল। তবে, ইঁদুরের উপর করা পরীক্ষা থেকে কি এমন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে? এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বোধ করলেন টনি এবং তার সহযোগীরা। সেই মতো মানুষের শরীরেও পরীক্ষা শুরু করেছেন টনি। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত বেশ কয়েক জনকে এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের শরীরে নবীন রক্তের প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে ফলাফল।

তবে, টনিদের এই ধারণা অবশ্য নতুন নয়। ১৬১৫-এ জার্মান চিকিত্সক আন্দ্রেজ লিবাভিয়াস এমনই একটা কথা বলেছিলেন। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি-র হয়ে এ নিয়ে গবেষণা করছিলেন রবার্ট বয়েল। নবীনের রক্ত প্রবীণের দেহে ঢোকানোর সেই পরীক্ষা কিন্তু রক্ত সম্পর্কে অতি অল্প জ্ঞান থাকায় শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। এর পরে, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ড এই পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে। ১৬৯০-এ পোপও এই ধরনের পরীক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আনেন।
এর প্রায় ৩০০ বছর পরে সেই গবেষণার জন্য নতুন কোম্পানি খুলেছেন টনি। এই ব্যাপারে সাহায্য করছে এক জাপানি ধনকুবের পরিবার। ওই পরিবারের প্রধান আক্রান্ত ছিলেন অ্যালঝাইমার্স-এ। তাকে কোনও কারণে রক্তের নতুন প্লাজমা দিতে হয়েছিল। এরপরে অবস্থার হঠাত্ উন্নতি হয়। টনিদের কাজ জানতে পেরে সেই পরিবার সাগ্রহে এগিয়ে আসে।

টনিদের এই গবেষণা আশার জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। পাশাপাশি আশঙ্কারও। এর পরে নবীনের রক্ত নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে যাবে না তো? কিডনি, ফুসফুস, লিভার নিয়ে বিশাল কালোবাজারি হয়। এ বার তার সঙ্গে রক্তও না জুড়ে যায়! আশার মধ্যে শঙ্কাতেও রয়েছেন টনিরা।

তবে, গবেষণার কথা প্রকাশ পেতেই টনিদের ই-মেল উপচে পড়ছে। নানা প্রস্তাব এবং প্রশ্ন সেখানে আসছে। একটা বিষয়ে সকলের মিল, ‘আর জরাগ্রস্ত হতে হবে না তা হলে’ বলে টনিকে ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment