ইন্টারনেট অব থিংস : বদলে দেবে বিশ্ব

ইন্টারনেট অব থিংস পদবাচ্যটি হতে পারে হার্ট মনিটর ইমপ্লান্ট করা কোনো এক ব্যক্তি, বায়োচিপ ট্রান্সপন্ডার সংবলিত পশুর খামার, ড্রাইভারকে সতর্ক করার জন্য বিল্টইন সেন্সরসহ অটোমোবাইল অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বা মানুষের তৈরি বস্ত্ত, যার থাকতে পারে একটি আইপি অ্যাড্রেস এবং যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম
। ইন্টারনেট অব থিংস বিষয়টি সম্ভবত বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল ইত্যাদি ম্যানুফেকচারিংয়ের ক্ষেত্রে মেশিন-টু-মেশিন কমিউনিকেশনে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেসব পণ্য মেশিন-টু-মেশিনে কমিউনিকেশনে সক্ষম করে তৈরি করা হয়, সেগুলোকে সাধারণত উল্লেখ করা হয় স্মার্ট হিসেবে।

১৯৯৯ সালের আগে পর্যন্ত ইন্টারনেট অব থিংসের ধারণার জন্ম না হলেও এ পদবাচ্যের প্রচলন শুরু হয় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। প্রথম ইন্টারনেট অ্যাপ্লায়েন্সের উদাহরণ হলো ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত একটি কুকি মেশিন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রোগ্রামারেরা মেশিনের সাথে কানেক্ট হয়ে মেশিনের স্ট্যাট্যাস চেক করে এবং সিদ্ধান্ত নিতে বা বুঝতে পারে যে, তাদের জন্য আসলে পান করার জন্য কোনো পানীয় আছে কি না কিংবা মেশিন ট্রিপ ডাউন করা উচিত হবে কি না, তাও সিদ্ধামত্ম নিতে পারে এ মেশিন।
ইন্টারনেট অব থিংস পদবাচ্য বা টার্মটির প্রচলন শুরু হয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অটো-আইটি সেন্টারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক কেভিন অ্যাশটনের মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে Procter & Gamble -এর একটি প্রজেক্টে কাজ করার সময় কেভিন ইন্টারনেট অব থিংস পদবাচ্যটি ব্যবহার করেন। ১৯৯৯ সালে কেভিন অ্যাশটন ইন্টারনেট অব থিংস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেন RFIDJournal.com সাইটে।
তিনি বলেন, আজকের দিনের কমপিউটারের মতো ইন্টারনেটও তেমন তথ্যের জন্য পুরোপুরি মানুষের ওপর নির্ভরশীল। আনুমানিক প্রায় ৫০ পেটাবাইট (১ পেটাবাইট হলো ১০২৪ টেরাবাইট) ডাটা ইন্টারনেটে আছে, যা প্রথম ক্যাপচার তৈরি হয় মানুষের মাধ্যমে যখন টাইপ করা হয়, ডিজিটাল ছবি তোলা হয়, রেকর্ড বাটনে প্রেস করা হয় অথবা বারকোডে স্ক্যান করা হয়। তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ইন্টারনেটের গতানুগতিক ডায়াগ্রামে সার্ভার এবং রাউটারসহ আর কিছু সম্পৃক্ত থাকলেও বাদ দেয়া হয় সবার জন্য প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিপুলসংখ্যক রাউটার। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি হলো লোকজনের মনোযোগ এবং নির্ভুলতা কম, যার অর্থ হচ্ছে বাস্তব জগৎ সম্পর্কে এগুলো ভালো ডাটা ক্যাপচার করতে পারে না।

অ্যাশটন আরও বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে ইন্টারনেট অব থিংসের প্রসার ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকলেও একে এখনও অনেকদূর যেতে হবে। তিনি বলেন, আইওটি বিশ্বকে বদলে দিতে পারবে, যেমনটি ইন্টারনেট করেছে।

ইন্টারনেট অব থিংসের উদাহরণ

ইন্টারনেট অব থিংসকে বুঝার সুবিধার্থে কিছু উদাহরণ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দেখার জন্য আইবিএমের ‘Smarter Planet’ টিম একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও তৈরি করে। যেখানে ইন্টারনেট অব থিংসের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে কিছু চমৎকার উদাহরণ দিয়ে। ধরুন, আপনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। আপনি চাচ্ছেন অফিস থেকে বাসায় ফেরার ৩০ মিনিট আগে আপনার হিটারটি সক্রিয় হয়ে আপনার বাথরুম গরম করবে, আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো। গোসলের সময়ই সম্ভবত অডিও ঘোষণার মাধ্যমে জানতে পারবেন রাতের বেলায় তাপমাত্রা কতখানি নেমে যাবে। আপনার গাড়ি সক্রিয় হয়ে উঠবে, যাতে উইন্ডশিল্ডে জমে থাকা বরফ গলে যায়। এছাড়া ট্রাফিক অবস্থা জেনে নিয়ে বাসা থেকে ১০ মিনিট আগে-পরে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনার গাড়ি বলে দিতে পারবে ফেরি কখন ঘাটে ভিড়বে। সুতরাং তাড়াহুড়োর কোনো কারণ নেই। এ ধরনের তথ্য সবসময় আপনাকে সরবরাহ করবে ইন্টারনেট অব থিংস। আপনার কফি মেকার বাসায় পৌঁছার কিছু আগে আপনার জন্য কফি তৈরি করে রাখবে কিংবা আপনার বাসার লন্ড্রি লাঞ্চ টাইমে কাপড়-চোপড় ধুয়ে শুকিয়ে রাখবে। এ ধরনের কানেক্টেড ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যান্ডেল হবে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। বস্ত্তত এসব স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সের কারণে আপনি পাবেন স্মার্টফোন, স্মার্টগাড়ি, স্মার্টঅফিস ইত্যাদি।

ইন্টারনেট অব থিংসের বার্ষিক আয়

আইসিটি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি সম্প্রতি ২০১৪-১৭ সালের জন্য ইন্টারনেট অব থিংসের ওপর ভবিষ্যৎদ্বাণীমূলক এক রিপোর্ট তৈরি করে। এ রিপোর্টে উন্মোচন করা হয় উৎপাদক এবং সরকারি ভার্টিকেল সেক্টরে কনজ্যুমারদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধার প্রধান ক্রমোন্নতি।

এই রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, টেকনোলজি ও সার্ভিসের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অব থিংসের আয় ২০১২ সালে ৪.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার থেকে উন্নীত হয়ে ২০১৭ সালে ৭.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নতি হবে ৮.৮ শতাংশ।

আইডিসির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ইন্টারনেট অব থিংস খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে ঠিকই, তবে আনুলম্বিকভাবে এ বাজার প্রবৃদ্ধি সব জায়গায় সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইন্টারনেট অব থিংসের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্রমবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেগুলো হলো অটোমেটিভ, ট্রান্সপোর্টেশন ও ইউটিলিটিজ খাত।

আইডিসির তথ্য মতে, আনুলম্বিক বাজার থেকে চালিত ইন্টারনেট অব থিংসের জন্য আইটি খাতে অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে সম্পৃক্ত রয়েছে ইন্টারনেট কানেক্টেড হোম, স্মার্টমিটার, কানেক্টেড গাড়ি, স্মার্টগ্রিড এবং কানেক্টেড হেল্প ইত্যাদি। আইডিসির রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়- আনুলম্বিক বাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্টারনেট অব থিংস অবশ্যই বুঝতে হবে, কেননা ইন্টারনেট অব থিংসের সফলতা বা মূল্য নির্ভর করে মার্কেটের আলোকে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহারের ওপর। এ মন্তব্যটি করেন আইডিসির সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট স্কট টিয়াজকন।
এর জন্য চাই দক্ষ জনশক্তি

প্রযুক্তিবিদদের লক্ষ্য এখন কোটি কোটি কানেক্টেড ডিভাইসের একটি নেটওয়ার্ক। এ বিষয়টি প্রযুক্তিবিশ্বে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান সিসকো, ইন্টেল ও জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এদের সবারই রয়েছে ইন্টারনাল বিজনেস ইউনিট, যেগুলো ওই নেটওয়ার্ক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ডেডিকেটেড।

অ্যানালিস্ট ও ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অবস্থায় বাজারে নতুন ধরনের আইটি বিশেষজ্ঞের চাহিদা ব্যাপক, বিশেষ করে যারা নতুন পণ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং করেন এবং তাদের সংগৃহীত ডাটা প্রসেস যারা করতে পারবেন তাদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ইন্টারনেট অব থিংস তথা আইওটির ক্ষেত্রে প্রচুর জনবলের অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।

২০১১ সালে ম্যাককিনসে (Mckinsey) রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গভীরভাবে ডাটা অ্যানালাইসিসে mÿg `ÿ লোকবলের অভাব হবে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার জনের। ১৫ লাখ ম্যানেজার ও অ্যানালিস্ট ব্যবসায়ের সিদ্ধামত্ম নেন তাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে।

দক্ষ জনশক্তির অভাবের ফলে জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণভাবে ডাটা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এই তথ্য দিয়েছেন জেনারেল ইলেকট্রিকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্কো অ্যানোজিয়াটা (Marco Annuziata)। ২০১১ সালে এই কোম্পানিটি ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান রামোন নামে একটি সফটওয়্যার সেন্টার খোলে। সেখানে শত শত কর্মী ভাড়া করে প্রশিক্ষিত করা হয় কোম্পানির ইন্টারনেট প্রজেক্টের সাথে কনসাল্ট করার জন্য। কেন্দ্র থেকে একজন বিশেষজ্ঞ জিই কর্মীদেরকে সহায়তা দিতে পারে জেট ইঞ্জিন থেকে সহায়ক ডাটা সংগ্রহ এবং অ্যানালাইজ করার জন্য, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং জ্বালানির ব্যবহার হয় উন্নত।

জিইর প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্কো অ্যানোজিয়াটা আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যমত্ম না পর্যাপ্ত গ্লোবাল আইটি ডাটা সায়েন্স এবং সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করতে সক্ষম ওয়ার্ক ফোর্স তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে কাজ করতে হবে তাদেরকে ডেভেলপ করার জন্য। জিই আশা করছে, এরা এ ধরনের কাজে পারদর্শী এক হাজার বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে সক্ষম হবে।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলো জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অভিজ্ঞ বা দক্ষ কর্মীদেরকে খোঁজ করে থাকে। অ্যানোজিয়াটা বলেন, আমাদের আরও অনেক কর্মী দরকার, যারা ডাটা সায়েন্টিস্ট ও অপারেশন ম্যানেজার উভয় ধরনের গুণসম্পন্ন। তিনি আরও বলেন, কীভাবে ডাটা ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে অ্যানালাইটিক্স ব্যবহার করতে হয়, তা যেমন বুঝতে হবে, তেমনি বুঝতে হবে তাদের নিজেদের ব্যবসায় লাইন কেমন হবে তা-ও।
সম্প্রতি সিসকো ‘ফগ কমপিউটিং’ ডেভেলপ করার ঘোষণা দেয় অথবা একটি নেটওয়ার্ক ডেভেলপ করার কথা ঘোষণা দেয়, যা ডিভাইসগুলো থেকে ডাটা সংগ্রহ করে তৈরি করবে ইন্টারনেট অব থিংস। এ ক্ষেত্রেও অনুরূপভাবে হায়ার করার জন্য লোক খোঁজ করছে। এমন তথ্য দিয়েছেন সিসকোর আইওটি ডিভিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জোসেফ ব্র্যাডলি। তবে এর সাথে সাথে কোম্পানি অন্য প্রার্থীদের খোঁজ করছিল, যারা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির সাথে সহযোগীরূপে কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়, কোম্পানির বাইরেও যাতে কাজ করতে পারে সে বিষয়টিও তাদের মাথায় ছিল। সিসকো নেটওয়ার্কের সাপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য এরা এ কাজটি করেছিল।
অ্যানোজিয়াটা আরও বলেন, যদি আপনি ১০ বছর আগে ফিরে যান, তাহলে দেখতে পাবেন এন্টারপ্রাইজ জুড়ে যেসব উদ্ভাবন হয়, তার ৮০-৯০ শতাংশই আসে এই কোম্পানি থেকে। যদি আপনি বর্তমান আলোকে চিমত্মা করেন, তাহলে দেখতে পারবেন, প্রায় ৫০-৫০ শতাংশ, খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন আসে সিসকো কোম্পানির বাইরে থেকে, যেহেতু স্টার্টআপগুলো, হার্ডওয়্যার প্রস্ত্ততকারক এবং ডেভেলপারেরা সবাই চান ইন্টারনেট অব থিংসের সুবিধা ভোগ করতে।

ম্যাকিনসি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের অ্যানালিস্ট মিখায়েল চুই বলেন, নেটওয়ার্কের প্রতিটি পয়েন্ট সৃষ্টি করছে বিপুল পরিমাণ ডাটা, যা রিয়েল টাইমে প্রসেস করা দরকার। তবে এ ধারার তথ্য অ্যানালাইসিস করার জন্য এখন পর্যমত্ম অনেক আইটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পারেনি।

বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাটা সায়েন্স প্রোগ্রাম ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ছাত্ররা আইওটি প্রজেক্টে কাজ করার উপযোগী হতে পারে। সেপ্টেম্বরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে স্কুল অব ইনফরমেশন, ইনফরমেশন এবং ডাটা-সায়েন্সে সণাকোত্তর ডিগ্রি চালু করে। সব ক্লাসই হয় অনলাইনে। প্রোগ্রামের প্রথম দল অন্যান্য বিষয়ে স্কিলের সাথে সাথে শিক্ষাগ্রহণ করে অ্যাডভান্সড স্ট্যাটিসটিক্স, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং এবং সেন্সর ও মোবাইল ডিভাইস থেকে সংগৃহীত ডাটাকে প্রসেস করার বিষয়ে। এর সাথে ছাত্রদেরকে শিক্ষা দেয়া হয় নৈতিকতা এবং ডাটার গোপনীয়তার বিষয়ে। অন্য আরও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনুরূপভাবে ডাটা-সায়েন্সে প্রোগ্রাম চালু করে।

বার্কলে স্কুল অব ইনফরমেশনের ডিন অ্যাননালি সাক্সেনিয়ান বলেন, যখনই ইন্টেল ও সিসকোর মতো বড় বড় কোম্পানি ইন্টারনেট অব থিংসের নতুন উদ্যোগের কথা বলে, তখন তা হয়ে ওঠে এক তাগাদা, যা টেকনোলজি পাঠক্রমে বিকশিত হয়, যাতে আইটি স্কিলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো যায়।

সাক্সেনিয়ান আরও বলেন, জনগণকে ডাটা নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়, সচরাচর অসংগঠিত ডাটা হয় বিশাল আকারে এবং এগুলোকে এক্সপেস্নার করতে হবে। এরপর তাদেরকে গ্রহীতাদের সাথে কমিউনিকেটে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রায় ২৮ শতাংশ পাইলট ক্লাস পেশাদারিভাবে কাজ করছেন, যারা অবসর সময়ে তাদের ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

গার্টনার অ্যানালিস্ট হাং লিহোং বলেন, এই কোর্স সম্পন্ন করতে ১২-১৮ মাস সময় নেয়, তবে স্পেশালাইজড ডাটা-সায়েন্স প্রোগ্রামের জন্য এটি এখনও কমনপ্লেস নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না আইটি ট্রেনিং প্রোগ্রাম দ্রুতগতিতে বিপুলসংখ্যক ডাটা-সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে বিশেষজ্ঞদের একত্রে কাজ করতে হবে।

ইন্টারনেট অব থিংস যেভাবে বদলে দেবে বিশ্বকে

ইন্টারনেট অব থিংস ধারণা থেকে আমরা জানতে পারি- ইন্টারনেট এখন শুধু কমপিউটার ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্কই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে ইলেকট্রনিক উপায়ে যোগাযোগের একটি প্লাটফরমও বটে। এর ফলে বিশ্ব এখন তথ্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, যেহেতু ডাটা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে প্রবাহিত ও শেয়ার হবে এবং বহুজনের উদ্দেশে বারবার ব্যবহার হবে। অর্থনীতি এবং সমাজের ভালোর জন্য এ ডাটাগুলো হবে আগামী যুগের অন্যতম প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ।

কম দামের সেন্সর, কম ক্ষমতার প্রসেসর, স্কেলেবল ক্লাউড কমপিউটিং এবং সর্বব্যাপী ওয়্যারলেস কানেকটিভিটিসহ কিছু টেকনোলজি সম্মিলিতভাবে এ বিপ্লবকে সক্রিয় করে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান হারে বিভিন্ন কোম্পানি এসব টেকনোলজি ব্যবহার করছে, যাতে এদের পণ্যে ইন্টেলিজেন্স ও সেন্সিং অ্যামবেড করা যায়। এ কোম্পানিগুলো অনুমোদন করে প্রতিদিনের অবজেক্টে সেন্স এবং এদের সাথে ইন্টারেক্ট করার পরিবেশ। এসব ডিভাইসের কোনো কোনোটি মেশিন-টু-মেশিনে কমিউনিকেশনে সক্ষম। রোডওয়ের সেন্সর ইলেকট্রনিক উপায়ে গাড়িকে সতর্ক করে দেবে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে। স্মার্ট গ্রিড পাঠায় ডায়নামিক ইলেকট্রিসিটির প্রায়জিং ডাটা, যাতে হোম অ্যাপস্নায়েন্সের পাওয়ার কনজ্যাম্পশন অপটিমাইজ হয়। অন্যান্য ডিভাইস ইউজারদের কাছে তথ্য কমিউনিকেট করে সরাসরি এদের পণ্যের মাধ্যমে অথবা পরোক্ষ ভাবে পিসির ওয়েব ব্রাউজার বা মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে। একটি খামারের ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর থেকে মাটির অবস্থার ডাটা যুক্ত করতে পারে। এছাড়া নির্দিষ্ট প্লটে কীভাবে গাছ লাগাতে হয়, সার দিতে হয়।

ইন্টারনেট কানেকটেড ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে কমিউনিকেট করার মাধ্যমে আমাদের জীবনকে প্রভাবান্বিত করে স্মার্ট হোমের বাইরে। ইন্টারনেট অব থিংস তথা আইওটি কর্মচারীদের কাজের ধারা বদলে দেবে সময় ও রিসোর্স বাঁচিয়ে। শুধু তাই নয়, আইওটি যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়াবে তেমনই নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আইওটি বদলাবে কাজের ধরন

আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে কৃষি ক্ষেত্র পর্যন্ত সবকিছুতে ইন্টারনেট অব থিংস প্রভাব বিস্তার করছে। যেমন- কৃষি ক্ষেত্রে কখন কোন সময়ে, কোন ধরনের ভূমিতে কোন ফসল চাষ করা উচিত, কোন ধরনের সার ব্যবহার করা উচিত, সার ব্যবহারের নিয়মাবলী, পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহরাসহ পোকামাকড়ের ট্র্যাপ বা ফাঁদ সৃষ্টি করে তা নিয়ন্ত্রণ করা, ব্রিজের টোল আদায় যেমন করা যায়, তেমনই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা, চিকিৎসা সেবায় রোগীদের জন্য কখন কোন ওষুধ দরকার তাও বলে দিতে পারে ইন্টারনেট অব থিংস সংবলিত ডিভাইস।

বেশি বেশি ডাটা : আইওটি হবে একটি ডাটা মেশিন। এর অর্থ হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে ভাবতে হবে কীভাবে এরা তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সংগৃহীত তথ্য অ্যানালাইজ করবে। এই তথ্য নীতি-নির্ধারকদের জন্য যেমন জানা দরকার, তেমনি নতুন ফরমের ডাটা ইন্টেলিজেন্সে অভ্যসত্ম হতে হবে। যে পরিমাণের ও যে ধরনের তথ্য আইওটি সৃষ্টি করবে, সেগুলো ডাটা অ্যানালিস্ট, স্ট্র্যাটেজিস্ট, এমনকি কাস্টোমার সার্ভিসের জন্যও প্রবর্তন করবে নতুন বা সম্প্রসারিত আইন।

বোস্টন কলেজের ক্যারোল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের প্রফেসর এবং স্মার্ট প্রোডাক্টস, স্মার্টার সার্ভিসেস, স্ট্র্যাটেজিস ফর অ্যামবেডেড কন্ট্রোল প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা ম্যারি জে. ক্রনাইন বলেন- কোম্পানিগুলোকে বিপুল পরিমাণের ডাটার বন্যায় অ্যাক্সেস করতে হবে, যেগুলো সব কানেকটেড ডিভাইস সৃষ্টি করবে। তিনি আরও বলেন, ডাটাকে অ্যানালাইজ করা দরকার, যাতে কাস্টোমার ও ট্রেন্ড বোঝা যায়।

জেনে নিন কোথায় সবসময় সবকিছু আছে : ক্রনাইনের মতে, আইওটি কর্মস্থলের জীবন ও ব্যবসায়ের প্রসেসকে অনেক বেশি উৎপাদনশীল এবং কার্যকর করতে পারে।
লোকেশন ট্র্যাকিংকে অনেক সহজ করার মাধ্যমে আইওটির উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা বাড়াতে পারে। ইন্টারনেটে সংযুক্ত ইকুইপমেন্ট ও ডিভাইসগুলো ভৌগোলিকভাবে ট্যাগ করা থাকায় কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজির সময় বাঁচবে, অর্থ বাঁচবে জিনিসপত্র কম হারানোর কারণে। কোম্পানিগুলো ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, দ্রুতগতিতে অর্ডার ফুলফিল করা থেকে শুরু করে এদের ব্যবসায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রের দৃষ্টিকোণের
সম্ভাব্য লোকেশনকে ট্র্যাক করে বিসত্মৃত করতে পারে ফিল্ড সার্ভিস স্টাফদের।

যেকোনো জায়গায় দ্রুতগতিতে যোগাযোগ স্থাপন করা : আইওটি হলো আপনার প্রতিদিনে কমিউট করার পরবর্তী বড় বিষয়। মোবাইল ডিভাইসের ইন্টারকানেকটিভিটি, আপনার গাড়ি ও যে পথে গাড়ি চালাচ্ছেন তার ভ্রমণ সময় কমিয়ে দেবে। এভাবে আপনাকে এনাবল করবে দ্রুতগতিতে কাজ করার জন্য অথবা রেকর্ড সময়ে বার্তা পাঠাবে।
এখন ‘কানেকটডেড গাড়ি’ হলো আইওটির সক্ষমতা শুরুর দৃষ্টান্ত। অটোমটিভ ম্যানুফেকচারার যেমন জিএম ও বিএমডব্লিউ, এটিঅ্যান্ডটির সাথে মিলিত হয়ে গাড়িতে যুক্ত করছে এলটিই কানেকটিভিটি এবং সৃষ্টি করছে নতুন কানেকটেড সার্ভিস। যেমন রিয়েল টাইম ট্রাফিক ইনফরমেশন এবং সামনের ও পেছনের সিটের রিয়েল টাইম ডায়াগনস্টিক ইনফরমেশন। এমন তথ্য দিয়েছেন মেশিন-টু-মেশিন প্লাটফরম প্রোভাইডার এবং জেস্পার ওয়্যারলেস কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাকারিও ন্যামি। ভবিষ্যতে আইওটি রাস্তার স্পটলাইট থেকে শুরু করে সবকিছুই ইন্টিগ্রেট করবে।

ন্যামি আরও বলেন, এমন এক বিশ্বকে কল্পনা করুন, যেখানে শহরের অবকাঠামোয় ইনস্টল করা হয়েছে রোডসাইড সেন্সর, যার ডাটা ব্যবহার হতে পারে শহরের ট্রাফিক প্যাটার্ন অ্যানালাইজ করা ও ট্রাফিক লাইট অপারেশন অ্যাডজাস্ট করার জন্য, যাতে ট্রাফিক জ্যাম কমানো যায়।

সস্তা ও অধিকতর পরিবেশবান্ধব ম্যানুফ্যাকচারিং : ডিভাইস ইন্টারকানেকটিভিটির কারণে আমরা গ্রহণ করতে পারছি ‘স্মার্ট গ্রিড’ টেকনোলজি, যা ব্যবহার করে মিটার সেন্সর এবং অন্যান্য ডিজিটাল টুল, যাতে এনার্জি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সমন্বিত করতে পারে পাওয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সোর্স, যেমন সোলার ও উইন্ড।
ন্যামি আরও বলেন, ব্যবসায়ে অপচয় ও জ্বালানির কনজ্যাম্পশন কমিয়ে এবং অর্থনীতির দিক থেকে টিকে থাকা সম্ভব নয় এমন সম্পদ বাদ দিয়ে আইওটি উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, আইওটি এনার্জি প্রোডাকশনে দক্ষতা ট্রান্সমিশনকে উন্নত করতে পারে এবং রিনিউঅ্যাবলে সুইচ করার মাধেমে কমাতে পারে ইমেশেনকে।

পুরোপুরি রিমোট মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট : আইটি ডিপার্টমেন্টে থাকতে পারে কমপিউটার ও মোবাইল ডিভাইসে রিমোট অ্যাক্সেসের সুবিধা। তবে এমএনএইচ ইনোভেশন এবং ইন্টারনেট অব থিংস কাউন্সিলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রয় বেচারের মতে, আইওটি সৃষ্টি করবে ইন্টারনেট কানেকটেড অন্যান্য ডিভাইসে রিমোট অ্যাক্সেসের সুবিধা।

বেচার একটি স্টার্টআপ কমিউনিটেক দেন রিমোট টেকনোলজি, যাকে বলা হয় কাটিং এজ টেকনোলজি, যা স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের ওপর দেয় পুরো নিয়ন্ত্রণ। এর ফলে অন্যান্য ডিভাইসের ওপর অনুমোদন করে রিমোট ম্যানেজমেন্ট। এগুলোর সাথে রয়েছে অ্যান্ড্রয়িড ক্যামেরা ও সেটটপ বক্স।
খুব শিগগিরই এমডিএম টেকনোলজি সম্প্রসারিত হবে আইওটি ডিভাইসের রিমোট ম্যানেজমেন্টে, যা প্রবর্তন করবে আইটি ডিপার্টমেন্ট ও আইটি কানেকটেড কর্মীদের পরিবর্তন।

ডিভাইস ম্যানেজমেন্টে জটিলতা বাড়াবে : বেচারের মতে, কানেকটেড ডিভাইসের সংখ্যা যত বাড়তে থাকবে, তত বেশি করে বাড়তে থাকবে ডিভাইসগুলোর ম্যানেজিং জটিলতা। এখনকার কর্মচারীরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন যোগাযোগ, প্রোডাক্টিভিটি ও এন্টারটেইনমেন্টের জন্য। আইওটির কারণে এগুলোর থাকবে বাড়তি ফাংশন ও আইওটি কানেকটেড ডিভাইস কন্ট্রোলিং ক্ষমতা। বেচার আরও বলেন, ভবিষ্যতের অনেক আইওটি কানেকটেড ডিভাইসে কোনো স্ক্রিন থাকবে না। ডিভাইসের ওপর নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত হবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের কারণে জটিলতা আরও বাড়বে। এর ফলে কর্মচারীরা ও আইটি ডিপার্টমেন্ট পাবে কাজ করার জন্য আরও ব্যাপক রেঞ্জের প্লাটফরম। শুধু অ্যান্ড্রয়িড বা আইওএস নয়, এগুলোর জন্য দরকার হবে কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ- কীভাবে ক্রস প্লাটফরমে কানেকটেড ডিভাইসগুলো ম্যানেজ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা জানার জন্য।

ইন্টারনেট অব থিংস আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেভাবে দৃঢ়ভাবে জুড়ে থাকবে : যত বেশি মেশিন একে অপরের সাথে যোগাযোগ করবে এবং সিস্টেম ইন্টিগ্রেট হবে, আমাদের জীবন তত বেশি ইন্টারনেট অব থিংসনির্ভর হয়ে উঠবে। যেমন- আপনি কখনই গাড়ির তেল পরিবর্তনের কথা ভুলবেন না। সত্যিকার অর্থে আপনার ‘স্মার্ট’ গাড়ি অগ্রাধিকারভিত্তিতে আপনাকে সহায়তা দেয়ার জন্য বলে দেবে গাড়ি টিউনআপের চূড়ান্ত সময় অথবা টায়ারের চাপ। আপনার ক্যালেন্ডার ক্রশ রেফারেন্সিং এক ক্লিকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুনিশ্চিত সময় প্রদান করবে।
ইন্টারনেট অব থিংসে শীর্ষ পাঁচ হুমকি

গাড়ি থেকে শুরু করে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস পণ্য পর্যমত্ম কোটি কোটি কানেক্টেড ডিভাইসই ইন্টারনেট অব থিংস। সিসকোর ইন্টারনেট বিজনেস সলিউশন্স গ্রুপ অনুমান করছে, ২০১০ সাল পর্যমত্ম সারা বিশ্বে ১২.৫ বিলিয়ন কানেক্টেড ডিভাইস ছিল, যা ২০১৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে ২৫ বিলিয়নে উন্নীত হবে।
নিরাপত্তার আলোকে ইন্টারনেট অব থিংস কী? : ক্রমবর্ধমান বাজারের দিকে খেয়াল রেখে সিএসও চিহ্নিত করেছে আইওটি ডিভাইস, যা আগামী বছরগুলোতে কয়েক ধরনের হুমকির মধ্যে পড়বে। সিএসও খুব সতর্ক আছে তাদের অর্গানাইজেশনের সম্ভাব্য ক্ষতি ও হুমকির ব্যাপারে এবং সে অনুযায়ী প্রস্ত্ততিও নিয়েছে।

ইন-কার ওয়াইফাই : ভিশনগেজ লিমিটেডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী কানেক্টেড গাড়ির থেকে ২০১৩ সালে রাজস্ব আদায় ২ হাজার ১৭০ কোটি ইউএস ডলারে উন্নীত হওয়া উচিত, যা ২০১৪ সালে আরও বাড়বে। আবার Sans Institue এর ইমার্জিং ট্রেন্ডসের ডিরেক্টর জন পেসকাটরের তথ্য মতে, নিউ ইয়ার অফারের মতো ফোর্ড এবং জিএম কোম্পানি ক্রমবর্ধমান হারে যেমন অফার করে আসছে ইন-কার ওয়াইফাই, তেমনই অফার করে আসছে গাড়িকে মোবাইল হটস্পটে পরিণত করা এবং যাত্রীর স্মার্টফোন, ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ডিভাইসকে ইন্টারনেটে যুক্ত করার সুবিধা প্রদানে।

তবে ইন-কার ওয়াইফাইয়ে রয়েছে গতানুগতিক ওয়াইফাই হটস্পটের মতো একই ধরনের সিকিউরিটি ভলনিয়ারিবিলিটি। পেসকাটের মতে, ফায়ারওয়াল ছাড়া ছোটখাটো ব্যবসায়ের সাথে ওয়াইফাই ইনস্টলেশন করা ইন-কার ডিভাইসগুলো ও ডাটা নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকবে। কেননা হ্যাকরেরা একবার নেটওয়ার্কে স্পুস তথা গাড়িতে অ্যাক্সেস করতে পারলে ডাটা সোর্সের বাইরে যুক্ত হতে পারবে যেমন অনস্টার (Onstar) সার্ভারের সাথে যুক্ত হতে পারবে এবং সংগ্রহ করতে পারবে গাড়ির মালিকের PII যেমন ক্রেডিট কার্ড নম্বর সংগ্রহ করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, এটি শুধু একটি উদাহরণ। একমাত্র কল্পনায় হ্যাকারদের আক্রমণের ধরন সীমিত করতে পারেন। হ্যাকারেরা যখন ইন-কার ওয়াইফাইয়ের অ্যাক্সেস করতে পারবে, তখন স্পুসিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে পারবে যাত্রীর ডিভাইস এবং গাড়ির আইডেন্টিটি।

সিআইএসও (ClSOs) এবং সিএসও (CSOs) প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মী পেশা বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের জন্য আরও উদ্বিগ্ন বিষয় হলো এই ভলনিয়ারিবিলিটি। কেননা হ্যাকারেরা এগুলো ব্যবহার করে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে এমন তথ্য দিয়েছেন প্রিসায়েন্ট সলিউসন্সের সিআইও জেরি ইরভাইন।

এম হেলথ অ্যাপ্লিকেশন/মোবাইল মেডিক্যাল ডিভাইস : এবিআই রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের লিড অ্যানালিস্ট জোনাথন কলিন্সের মতে- স্পোর্টস, ফিটনেস এবং এম হেলথ জুড়ে পরিধানযোগ্য ওয়্যারলেস ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান বাজার ২০১৩ সালে ৪ কোটি ২০ লাখ থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ১৭ কোটি ১০ লাখ হবে। উইন্ডোজচালিত মোবাইল মেডিক্যাল ডিভাইসে ২০১৪ সালে হ্যাকারের হামলার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে এবং তা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। নিউস্টারের সিনিয়র টেকনোলজিস্ট রডনি জোফির মতে, মেডিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে আছে পেসপেকারসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গতানুগতিক ম্যানুফেকচারেরা ব্যবহার করে প্রোপ্রাইটরি এমবেডেড সিস্টেম, যা হ্যাক করা কঠিন তাদের ক্লোজড সোর্স কোড ও সীমাবদ্ধ করার কারণে। তবে ননট্রেডিশনাল ডিভাইস প্রস্ত্ততকারকেরা প্রায় সময় ব্যবহার করেন উইন্ডোজের গঠন বা ফরম।

স্মার্ট ডিভাইস অধিকতর স্মার্ট হলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে রয়েছে দুর্বলতা : উইন্ডোজ সস্তা, সর্বব্যাপী এবং প্রোগ্রামারদের কাছে সুপরিচিত হওয়ায় এটি ওইসব ডিভাইসে খুবই জনপ্রিয়- এমন কথা বলেছেন জোফি। তিনি আরও বলেন, ডেস্কটপ কমপিউটার উইন্ডোজের মতো নয়, এমনসব ডিভাইসে উইন্ডোজের জন্য কোনো প্যাচিং ম্যাকানিজম নেই। এ ধরনের যত বেশি ডিভাইস ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির যেমন ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হবে, ভাইরাস এসব ডিভাইসের মধ্যে তত বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশাঙ্কা রয়েছে।

এসব ডিভাইসে রিমোর্ট অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে সিএসও’র উচিত আরও বেশি সচেতন হওয়ার। কেননা সম্ভাব্য মেলিশাস আক্রমণ হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে হ্যাকারেরা।

পরিধানযোগ্য ডিভাইস, গুগল গ্লাস : গ্লোবাল ওয়্যারেবল টেকনোলজি মার্কেট ২০১৩ সালে ৪.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত হবে। আর ভিশন গেইন লিমিটেডের মতো তা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকবে ২০১৪ সালে। এ মার্কেটে গুগল গ্লাসের মতো ডিভাইসগুলো সরাসরি আক্রমণের শিকার হবে। কেননা এগুলো ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে। এছাড়া এসব ডিভাইসের সাথে সিকিউরিটি সলিউশন্স নেই, যদিও কিছু ক্ষেত্রে থাকে, তবে তা খুবই সীমিত পরিসরে।

গুগল গ্লাসে হ্যাক করার ফলে হ্যাকারেরা পেয়ে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেট তথ্য এবং ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপ্রাইটরি। একটি প্রতিষ্ঠান জানে না, কোন ধরনের ডাটা বা কতটুকু ডাটা পরিধানযোগ্য ডিভাইস ব্যবহার করে গুগল গ্লাসের মাধ্যমে। যেহেতু এগুলো অফিস এবং এন্টারপ্রাইজের অন্যান্য পরিবেশ জুড়ে মুভ করে যাচ্ছে। হ্যাকারেরা এসব অডিও এবং ভিডিও কপি করে নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়্যারেবল ডিভাইসের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিত নীতিমালা প্রণয়ন করা, যা সীমাবদ্ধ করবে কোথায় কোথায় এ জিনিসগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে, কখন এগুলো ব্যবহার করা যাবে এবং তাদের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার কোনটি ইত্যাদি।

রিটেইল ইনভেন্টরি মনিটরিং এবং কন্ট্রোল, এমটুএম : ভিশন গেইন লিমিটেডের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে গ্লোবাল ওয়্যারলেস এমটুএমের রাজস্ব আয় ৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত হবে। ২০১৪ সালে ব্যবসায়ে থ্রিজি সেল্যুলার ডাটা ট্রান্সমিশন প্যাকেজসহ ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকবে। এই ট্রান্সমিটারগুলো ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হলে এবং এগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ইন্টারনেটভিত্তিক হামলার জন্য ভঙ্গুর করে তুলবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা।

No comments:

Post a Comment