কল্পনা নয় বাস্তবেই আছে 'মৎসকুমার'

মৎস্যকন্যা বা মৎস্যকুমারীর কথা শোনা যায় অহরহ। অতি কাল্পনিকরা আবার এই কাল্পনিক কন্যার দেখাও পান। কিন্তু বাস্তবে খোঁজ পাওয়া গেছে এমন একজনের যাকে অনায়াসে বাস্তবের মৎস্যকুমারী বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারতো। তবে সমস্যা একটাই। তিনি কুমারী নন, কুমার।
শুধু একটা সাঁতারের পোশাক পরে এবং গগলস চোখে দিয়ে তিনি তলিয়ে যেতে পারেন সাগরের অতলে।

এই মৎস্য কুমারের নাম অ্যালেক্সই মলচানভ। তিনি ডাইভিং যন্ত্র এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এক দমে সাগরের ৯৬ মিটার বা ৩১৫ ফিট গভীরে ডুব দিয়ে আবার উঠে আসতে পারেন। তিনি যখন ডুব দেন তখন তার চোখে পৃথিবীর সূর্যের আলো কমে যায়, শব্দ কমে যেতে যেতে থেমে যায়, অন্ধকার নেমে আসে, আর মিনিটকে মনে হয় সেকেন্ডের সমান দ্রুত।

ডুবুরীদের দুইপায়ে মাছের লেজের মত পাখনা বা ফিন লাগানো থাকে যাতে পানিতে সহজেই চলতে পারেন। কিন্তু অ্যালেক্সই শুধুমাত্র একটা ফিন লাগিয়ে পানির ১৩০ মিটার (৪২৫ ফিট) গভীরে সাঁতরে বেরিয়েছ বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। এই অসাধারণ পৌরাণিক ক্ষমতার কারণেই তার নাম দেয়া হয়েছে ‘মৎস্য কুমার’ বা মারম্যান।

ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য কারণ, সাগরে শুধু দম রাখতে পারাটাই বড় কথা নয়। সাগরের যত গভীরে যাওয়া যাবে পানির চাপ ততই বাড়তে থাকবে। ৪২৫ ফিট গভীরে যে পানির চাপ হবে তাতে বেঁচে থাকতে হলে অ্যালেক্সইর মনকে অবশ্যই দেহের বাইরে গিয়ে শুন্যে ভাসতে হবে।

২৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তী বলেন, ‘যন্ত্রপাতি ছাড়া এতো গভীরে যে ডুবুরিরা ডুব দেয় তাদের বেঁচে থাকার একটাই পথ সেটা হচ্ছে মনকে শান্ত রাখা। কোনভাবেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না। মন উত্তেজিত হলে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন পড়বে মস্তিষ্কের। তবে ঐ অবস্থায় মনকে নিবিষ্ট রাখা কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজ যে করতে পারবে তার কাছে সময় জিনিসটা অদৃশ্য হয়ে যাবে।’ অ্যালেক্সই পানির নিচে দম ধরে রাখতে পারেন ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই বিস্ময়কর ক্ষমতা তিনি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। আলেক্সির মা নাতালিয়া মলচানোভা একবার দম নিয়ে পানির নিচে থাকতে পারতেন ৯ মিনিট ২ সেকেন্ড। ফ্রি ডাইভিংয়ে নাতালিয়া ছিলেন রানীর সমতুল্য। কারণ তিনি ৪১ বার বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। তারা মা বেটায় এই কাজে বিশ্ব সেরা

দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে গত বছরের আগস্ট মাসে আলেক্সির মা নাতালিয়া মারা যান। তবে সাধারণ মৃত্যু তার হয়নি। স্পেনের উপকূলে একটি প্রশিক্ষণ ডাইভিংয়ের সময় তিনি ডুব দিয়েছিলেন সাগরের অতলে, আর ওঠেন নি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল কিন্তু লাভ হয়নি। যে সাগরে ডুব দিতে তার ভালো লাগতো সেই সাগরেই হারিয়ে গেছেন চিরতরে।

No comments:

Post a Comment