লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার কী জানেন ?

সিএমএস ডিটেক্টরে প্রকাশিত হিগস বোসন কণা।
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (ইংরেজি: Large Hadron Collider – LHC) পৃথিবীর বৃহত্তম কণা ত্বরক। ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ রশ্মির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য প্রমিত মডেল-এর সত্যতা ও সীমাবদ্ধতা নির্ণয় করা।
কণা পদার্থবিজ্ঞানে বর্তমানে এই প্রমিত মডেলই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। এলএইচসি উদ্ভাবন করেছে ইউরোপের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সংস্থা সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)। এলএইচসি জেনেভা শহরের নিকটে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত।
এলএইচসি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে শক্তিশালী কণা ত্বরক। ৮৫টি দেশের ৮০০০-এরও অধিক বিজ্ঞানী এই ত্বরক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেছেন। এছাড়া অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার এই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো পুরো এলএইচসি-তে প্রোটন রশ্মি চালনা করা হয়। এর আগে ৮-১১ আগস্টের মধ্যে এতে প্রাথমিক কণা রশ্মি ঢোকানো হয়, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ১.৯ কেলভিনে (-২৭১.২৫° সেলসিয়াস) নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম উচ্চশক্তির সংঘর্ষ ঘটানো হয় ২১ অক্টোবর। তাই ২১ অক্টোবরকেই এলএইচসি’র উদ্বোধন দিবস বলা হচ্ছে।
পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার পর কলাইডারটির ভেতরে হিগ্‌স বোসন তৈরি হওয়ার কথা। এই কণাকে “ঈশ্বর কণা” বলা হয়। এটাই একমাত্র মৌলিক কণা যাকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের প্রমিত মডেল-এর অজানা তথ্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে। এছাড়া মৌল কণাগুলো কিভাবে ভর বা এধরনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য লাভ করে তাও এর মাধ্যমে জানা যাবে।
এর আগেও অনেকগুলো হ্যাড্রন-কলাইডার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এলএইচসি-র মত অন্য কোনোটিই এতো আলোচিত হয়নি। এর কারণ এলএইচসি’র উচ্চশক্তি। এর মধ্যকার সংঘর্ষের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন বা মহাবিষ্ফোরণের ঠিক পরের শর্তগুলো তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে শর্তগুলো খুব ছোট স্কেলে কাজ করবে।
অনেকেই এই পরিকল্পিত পরীক্ষার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলছেন, এর মাধ্যমে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু বিজ্ঞানী মহল় এধরনের কোনো নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

নির্মানের কারন
পদার্থবিজ্ঞানীগণ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মাধ্যমে পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক প্রশ্নের ঊত্তর খুজে পাবার আশা করছেন। যার মধ্যে মৌলিক কণা সমূহ, স্পেস টাইম এর গঠন, এই মহাবিশ্ব পরচালনার মৌলিক নিয়মের সমন্বয়, বিশেষত কোয়ান্টাম মেকানিকস এবং জেনারাল রিলেটিভিটি এর সেই সব জায়গা সমূহ যেখানে জ্ঞান অজানা, আস্বচ্ছ, কিংবা এরা কোনভাবেই খাটে না তা অন্তর্গত। তাছাড়া কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের ঊত্তরের আশায় লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার নির্মিত। যেমন
• হিগস্‌ মেকানিজামে বর্ণিত ইলেক্ট্রোউইক সিমেট্রি ব্রেকিং পদ্ধতিতে কি মৌলিক কণার ভরসমূহ আদৌ পাওয়া সম্ভব কিনা ? লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার দ্বারা আশা করা হচ্ছে যে এটি পদার্থ বিজ্ঞানের সোনার হরিণ হিগস বোসন বা ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে বা বাদ দেবে যার ফলে পুরো সাধারন মডেল বাতিল বলে গণ্য হবে।
• সুপার সিমেট্রি যা সাধারন মডেলের একটি বর্ধিত অংশ এবং পোইনকেয়ার সিমেট্রি ( Poincaré symmetry ) যা প্রকৃতিতে দেখা যায়। তারমানে কি সকল জ্ঞাত কণার সুপারসিমেট্রিক জোড়া আছে ?
• স্ট্রিং থিয়োরির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন মডেল যে অতিরিক্ত ডাইমেনশনের ভিবিষ্যৎবানী করেছে তা আদৌ আছে কিনা কিংবা থাকলে আমরা কি তা আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে পারি ?
• ডার্ক ম্যাটার ( Dark Matter ) এর ধর্ম কি যার পরিমাণ মহাবিশ্বের মোট ভরের প্রায় ২৩% ?
অন্যান্য প্রশ্ন সমূহ হচ্ছে, তড়িৎচৌম্বক বল, সবল নিউক্লিয়ার বল, এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বল কি আসলেই একটি একত্রিত বলের বিভিন্ন প্রকাশ, যেমনটি পূর্ব কল্পিত আছে গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন থিয়োরি মতে ?
• কেন মহাকর্ষ অন্যান্য মৌলিক বলের তুলনায় অত্যন্ত দুর্বল ?
• আর কি কোন কোয়ার্ক মিশ্রণ(Quark Flavor Mixing ) আছে সাধারণ মডেলের বাইরে ?
• কেন পদার্থ এবং প্রতি পদার্থের সিমেট্রির( Matter & Anti-Matter Symetry ) মাঝে গরমিল দেখা যায় ?
• মহাবিশ্বের প্রারম্ভে কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমার ( Quark-Gluon Plasma ) ধর্ম কি রকম ছিল ?

No comments:

Post a Comment