কেমন আছেন সিরিয়ার অর্কেস্ট্রা দলের সদস্যরা?

সিরিয়ার ন্যাশনাল অর্কেস্ট্রা ফর অ্যারাবিক মিউজিক তাদের স্বাতন্ত্র্যের জন্য অনেক জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। অর্কেস্ট্রা বা বাদ্যযন্ত্রের এই দল সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী আরব সংগীতের সাথে পুরনো ধারার ওপর এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য বিখ্যাত।
বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে বাদ্যযন্ত্রের এই দলের কনসার্ট। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব এসে পড়ে দলটির ওপর। কনসার্ট করা দূরে থাক। প্রাণ বাঁচাতে সদস্যরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদেরই একজন সুস্যান আসকান্দার। বাদ্যযন্ত্র দলটির বেহালাবাদক ছিলেন তিনি।
সুস্যান আসকান্দার বলছিলেন, যে দিন আমি দেশ ছেড়ে চলে আসছিলাম সেদিনকার কথা আমি কখনো ভুলবো না। সকাল তখন পাঁচ কি ছয়টা হবে। আমরা রাস্তার মধ্যে দাঁড়ানো, মনে হচ্ছিল মাথার ওপর দিয়ে রকেট যাচ্ছে। শুধু ভাবছিলাম নিরাপদে কিভাবে বের হব। সত্যিই সে মুহূর্ত ছিল অনেক কঠিন। সুস্যান জার্মানিতে পাড়ি জমান শরণার্থী হিসেবে। শরণার্থী শিবিরে কেটেছে তার প্রথম দিকের দিনগুলো।
এখন তিনি শরণার্থী শিশুদের স্কুলে সংগীতের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলছিলেন- ঘর বা বাড়ি এমন একটা অনুভূতি যেটাকে সারাক্ষণ মাথার মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। এটা শুধুমাত্র একটা ভৌগলিক অবস্থান না। এটা আমার মন খারাপ করে দেয়। ঘরহারা, হারানোর কষ্ট, রক্ত- একটা সময় আসে যখন আসলে কি হচ্ছে সেটা তুমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। আমি অনুভব করি আমি শুধুমাত্র এই কষ্টকে সংগীতের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। সুস্যান যখন শিক্ষার্থী ছিলেন স্কুলের তখন তিনি প্রথম অর্কেস্ট্রাতে যোগ দেন। আর এখন গত চার বছর হল তিনি অর্কেস্ট্রাতে বাজাননি।
আমরা প্রতিদিন একসাথে কাটাতাম। আমরা একই বিল্ডিং এ থাকতাম। হয় হাইয়ার ইনস্টিটিউটে নয়ত অপেরা হাউসে। সুতরাং অনেক স্মৃতি আর গল্প রয়েছে মনের মধ্যে। এমনকি যখন আমি চলে আসছিলাম আমার সব সময় ভিতরে একটা অনুভূতি ছিল- যেকোনো একটা কিছু আবার আমাদের সবাইকে একত্রিত করবে। এবং আমি আমার অনুভূতির ওপর আস্থাশীল ছিলাম। তখন থেকে আমরা আমাদের এই সংগীতকে ধরে রেখেছি। কারণ সংগীতই একমাত্র জিনিস যেটা আমাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। আর এই গ্রীষ্মেই অর্কেস্ট্রার আসর বসে লন্ডনে। পুর্নমিলন হয় সিরিয়ার ন্যাশনাল অর্কেস্ট্রা ফর অ্যারাবিক মিউজিকের সদস্যদের। সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো তাদের কনসার্ট হয় একসাথে।

No comments:

Post a Comment