'পোকেমন গো' নিয়ে পাগলামির পেছনের রহস্য

আধুনিক যুগে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার চোখ স্মার্টফোনে আটকে থাকে। তারা হয় ফেসবুকে আছেন বা ইমেইল দেখছেন বা টেক্সট করছেন। আরেকটি সম্ভাবনা আছে। তারা পোকেমন খুঁজছেন।
এটি একটি কার্টুন চরিত্র। জাপানে ১৯৯৬ সালে এই কার্টুনটি শুরু হয়। সেই থেকে পোকেমন গোটা বিশ্বের লাখো শিশুর মন-প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আর এর গেমেও কম যায় না। একে নিয়েও চলছে উন্মাদনা।
স্ক্রিনে খেলোয়াড়রা এই ভাইরাল মোবাইল গেমে খুঁজে পাবেন 'পোকেমন গো'। বাস্তব দুনিয়ার ছবির পাশে ভেসে উঠবে পোকেমনের বিচিত্র প্রাণীগুলোর চরিত্র। অনেকটা আঁচিলের মতো দেখতে ডিগলেট হঠাৎ করেই টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসবে। আগুনে দানবের মতো ন্যাশনাল মলের চারদিকে দেখা যাবে পনিটাকে। অস্ট্রিচের মতো ফোনের ওপরের দিকে হাজির হবে ডোডুও।
কার্টুনের এই ছোট ছোট দানবগুলোকে ধরপাকড় খেলোয়াড়দের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। এ মাসের ৬ তারিখ থেকে গেমটি বাজারে এসেছে। সেই থেকে ইতিমধ্যে তা জাতীয় উত্তেজনায় পরিণত হয়েছে। টুইটার যারা প্রতিদিন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে শুধু এ নিয়েই আলোচনা। গুগল ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের সবচেয়ে লাভজনক গেমে পরিণত হয়েছে। গতকাল নির্মাতা নিন্টেন্ডোর স্টক এক লাফে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
সম্ভবত এটা অগমেন্টেড রিয়েলিটি টেকনলজির প্রথমবারের সত্যিকার সফলতার গল্প। এখানে ডিজিটাল ও বাস্তব দুনিয়ার সংযোগ ঘটানো হয়েছে। এ গেমের কিছু অংশ বার্ড ওয়াচিং, কিছু অংশ জিওক্যাচিং আবার কিছু অংশ ট্রফি হান্টিং। এতে দেওয়া হয়েছে ১৯৯০-এর দশকের উচ্চমাত্রার নস্টালজিয়া।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের গেমিং বিশ্লেষক মাইকেল প্যাচার জানান, গেমটি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে অনেক বড় হবে। ভয় লাগে এটি খেলতে খেলতে মানুষ না রাস্তায় গাড়ির নিচে পড়েন।
আমেরিকার রিভারটনে ১৯ বছর বয়সী শায়লা উইগিন্স নদীকে একটা মানুষের দেহ ভাসতে দেখলেন। মিসৌরি পুলিশ পরে জানালো, ছিনতাইকারীরা পোকেমন গেমকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে মানুষকে এমন বিচ্ছিন্ন স্থানে এনেছে। শায়লা নিজেই পোকেমন খেলতেই সেখানে গিয়েছিলেন।
আরেক গেমার বলেন, এই গেম মুক্তি পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি এর প্রেমে পড়ে যাই। কুকুরটাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই গেম খেলছিলাম। কোথায় যেন পা দিয়ে পড়ে গেলাম। আমার পায়ের একটি হাড় ভেঙে গেলো। ৬-৮ সপ্তাহ লেগেছে সুস্থ হতে।
এই গেমে পোকেমন খেলোয়াড়দের ডিজিটাল পোকেমন শিকারের আমন্ত্রণ জানায়। আপনি যেখানে অবস্থান করছেন এই গেমে সেখানে প্রাণীগুলোর অবস্থান দেখানো হয়। এর জন্যে জিপিএস এবং নিনাটিক ল্যাবস-এর তৈরি বিশেষ অ্যালগোরিদম ব্যবহার করা হয়।
পোকেমন ধরতে খেলোয়াড়রা কোথায় হেঁটে যান এবং তাদের ওপর নজরদারি করেন স্মার্টফোনের মাধ্যমে। পর্দায় ওপরের দিকে আঙুলের ফ্লিকে এদের ধরার চেষ্টা করেন খেলোয়াড়রা। এদের ধরতে ব্যবহার করা হয় পোকেবল। একই ধরনের প্রাণী ধরতে ক্যান্ডি দিতে হয়। পোকেমনকে ক্যান্ডি খাওয়ালে তা শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
হোয়াইট হাউজের ঝর্ণার দিকে যদি কোনো পোকেমন থাকে তবে আপনাকে তাকে ধরতে অবশ্যই সিভিলিয়ান অংশে অবস্থান নিতে হবে।
এর মধ্যে ডেভেলপাররা মধুর বিপদে পড়েছেন। জনপ্রিয়তা এতটাই আকাশছোঁয়া যে তাদের সার্ভার ক্র্যাশ করছে। গতকালও নতুন কেউ নিউ প্লেয়ার হিসাবে সাইন আপ করতে পারেননি। এখন নিনাটিক এবং পোকেমন কোং গেমটিকে চালু রাখতে ব্যাপক কাঠখড় পোড়াচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা জানান, পোকেমনের জনপ্রিয়তা দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ক্লোন তৈরি হবে। একই ধরনের অ্যাপ নিজে শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের প্রফেসর টিমোথি ক্যারোন।
এই গেমের রিয়েল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি ফ্রাঞ্চাইজির প্রতিশ্রুতি ছিল। এই গেমটাকে সহজে শেয়ার করার মতো করেই তৈরি করা হয়েছে।
নিন্টেন্ডোর জন্য এই গেমটি হিট হওয়া খুবই জরুরি ছিল। এটি থেকে নির্মাতারা কমপক্ষে ২৫ মিলিয় কামাবেন এ বছরে। এটি বানানোর পাশাপাশি জাপানিজ কম্পানিটি দ্য পোকেমন কোং-এর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। নিজস্ব কনসোলেও খেলা যাবে এটি। মোবাইল গেমিংয়ে বহুদিনের খরা পোকেমনের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠেছে নিন্টেন্ডো।
প্যাচারের মতে, পোকেমন এখন মানুষের পাগলামি। প্রতিটা পোকেমন না ধরা পর্যন্ত মানুষের পাগলামি কখনো শেষ হবে না। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

No comments:

Post a Comment