অটিস্টিক শিশুর শিক্ষায় পোকিমন গো

শ্রেণিকক্ষে অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদানে হাল আমলের জনপ্রিয় গেইম পোকিমন গো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একজন গবেষক।

 অটিজম গবেষক ও শিক্ষক ক্রেইগ স্মিথ জানান, ক্লাসের ভেতরে এবং বাইরে শিক্ষার্থীদের অগমেন্টেড রিয়ালিটি গেইম ব্যবহার করতে দেওয়া হলে তাদের সামাজিক আচরণে লক্ষণীয় মাত্রায় উন্নতি ঘটতে পারে বলে তার গবেষণায় দেখা গেছে। বিশেষ করে অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে বলে জানান তিনি।
ইনডিপেন্ডেন্ট-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো অনেক কঠিন - এমনকি দোকানে যাওয়াটাও তাদের কাছে অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। তবে পোকিমন নিয়ে যে উদ্দীপনা আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে ঐ শিক্ষার্থীরাই গেইমটির সুবাদে অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে।"
তিনি আরও জানান, এ গেইমটি অটিস্টিক শিশুদের জন্য ভিজুয়াল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে, যা তাদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক হচ্ছে।
তিনি বলেন, "অটিস্টিক মানুষের মস্তিষ্ক দৃশ্যের প্রতি খুবই সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সাধারণত ৯০ শতাংশ অটিস্টিক শিশুই শ্রেণিকক্ষে দেখেই শেখে। শ্রেণিকক্ষে যেখানে শিক্ষা কার্যক্রমে অটিস্টিক শিশু অন্য শিশুদের মতো সাড়া না-ও দিতে পারে, সেখানে ভিজুয়াল শিক্ষাদান খুবই ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।"
শিক্ষার্থীদের ওপর ভিজুয়াল ও স্ক্রিননির্ভর শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পেয়ে তিনি শিশুর অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ সম্বলিত একটি গাইড দাঁড় করিয়েছেন। এ গেইমটিকে শিক্ষা কার্যক্রমের পক্ষে ঝুঁকি হিসেবে না দেখে বরং স্কুলের নিয়মিত কার্যক্রমে পোকিমন গোসহ অন্যান্য সহযোগী গেইম অন্তর্ভুক্ত করায় গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি বলেন, "শিশুদের বাসা থেকে বের হতে উৎসাহিত করাটা কঠিন হতে পারে। আর বিশেষ করে অটিস্টিক শিশুরা সামাজিক আচরণে অভ্যস্ত হতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তবে এ ধরনের গেইমগুলোর মধ্য দিয়ে তারা অন্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সৃষ্টি করতে এবং টুকিটাকি কথাবার্তা সহজেই বলতে পারে। আমার মতে, শিক্ষকদের উচিত শ্রেণীকক্ষে ঢোকার পথেই শিক্ষার্থীদের গেইম বন্ধ করতে বাধ্য না করা। আমরা যদি তাদের আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোকে সম্মান না করি, তবে তাদের কাছাকাছি পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।"
ইনডিপেন্ডেন্ট জানায়, মি. স্মিথ-এর প্রণীত এ গাইডে শিশুদের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে "ওয়াকিং জার্নাল", যা গেইমটির মাধ্যমে শিশুদের কোনো একটি কাহিনী বা ম্যাপ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে তাদের কল্পনানির্ভর উপস্থাপনা দক্ষতা থেকে শুরু করে গণিত দক্ষতার পর্যন্ত উন্নতি ঘটতে পারে বলে তার গবেষণায় উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, "আমি সাপ্তাহিক ছুটির জন্য তাদের বাড়ির কাজ ঠিক করে দিতে পারি যে 'আমি চাই তুমি তোমার শহরের চারপাশ ঘুরে দেখো', আর যদি তারা পোকিমন গো ব্যবহার করে, তবে তারা স্ক্রিনশট জমা দিতে পারবে।"
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা গেইমটি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন বলেও জানান তিনি। পোকিমন ধরার উদ্দীপনায় অনেক শিশুই প্রথমবারের মতো বাড়ির বাইরে পা দিচ্ছে বলে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান।
তিনি বলেন, "এতে শিশুরা তাদের সামাজিক সীমারেখার বাইরে পা দেওয়ার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে। আমার মনে হয় না আর কোনো গেইম পোকিমন গো এর মতো এ সংযোগটি তৈরি করতে পেরেছে।"

No comments:

Post a Comment